শিখ সাম্রাজ্যের ইতিহাস

গুরু নানক (১৪৬৯ – ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ )

  • শিখধর্মের প্রবর্তক এবং শিখদের প্রথম গুরু ।
  • ১৪৬৯ খ্রিঃ পাঞ্জাবের লাহোরের তালবন্দী গ্রামে ( বর্তমানে পাকিস্তানের নানকানা সাহিব) ক্ষত্রীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ।
  • তার আত্মজীবনী হল ‘জনমসাথী‘।
  • নানকের শিষ্যদের নাম ছিল শিষ বা শিখ । যে জন্য এই সম্প্রদায় ‘শিখ ’ ও এই ধর্মের নাম হয় শিখ ধর্ম ।
  • মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন ।
  • লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।
  • ভগবানের ব্যাখ্যা করতে তিনি নির্গুণ ও নিরাকার শব্দগুলির ব্যবহার করেছিলেন ।
  • গুরু নানক ছিলেন দিল্লির সুলতান সিকান্দার লােদীর সমসাময়িক ।

গুরু অঙ্গদ (১৫৩৯ – ১৫৫২ খ্রিস্টাব্দ )

  • শিখদের দ্বিতীয় গুরু ।
  • প্রকৃত নাম ভাই লেহান ।
  • পাঞ্জাবি ভাষার গুরুমুখী স্ক্রিপ্ট রচনা করেন ।
  • তাঁর আমলে লঙ্গরখানা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।
  • শিখদের শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য মাল আখাড়া তৈরী করেছিলেন ।
  • গুরু অঙ্গদ এর আমলে শিখগণ সুসংঘবদ্ধ সম্প্রদায় রূপে আত্মপ্রকাশ করে । একে ‘ Corporate Personality বলা হত ।

গুরু অমরদাস (১৫৫২- ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দ )

  • গুরু অঙ্গদের পর তৃতীয় শিখ গুরু হলেন অমরদাস , যিনি ১৫৫২ খ্রিঃ ৭৩ বছর বয়সে শিখ গুরু হন ।
  • শিখ সম্প্রদায়কে ২২ টি মঞ্জিতে বিভক্ত করেছিলেন । সেখানে একজন করে মহন্ত দায়িত্বে থাকত ।
  • সতীদাহ ও পর্দাপ্রথার বিরুদ্ধে প্রচার করেছিলেন ।
  • বিধবা বিবাহ সমর্থন করেছিলেন ।
  • গুরু অমর দাসের জন্য গােইন্দওয়ালে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে । সেখানেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মুঘল সম্রাট আকবর ।আকবরকে অমুসলিমদের ওপরে ধর্মীয় কর তুলে নেবার জন্য অনুরোধ করেছিলেন ।
  • গুরু অমরদাসের সময় শিখরা দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল যথা —১ ) গৃহী শিখ ও ( ২ ) গৃহত্যাগী শিখ । গৃহত্যাগী শিখ সন্ন্যাসীগণ ‘উদাসী ’ নামে পরিচিত ।

গুরু রামদাস (১৫৭৪- ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দ )

  • গুরু অমরদাস তার জামাতা গুরু রামদাসকে চতুর্থ গুরু ঘােষণা করেন । তার সময় থেকেই গুরুপদ বংশানুক্রমিক হয় ।
  • শিখদের বিবাহরীতি “আনন্দ কারাজ” এর প্রবর্তক ।
  • হারমিন্দর সাহিব বানানোর জন্য মুঘল সম্রাট আকবর রামদাসকে ১৫৭৭ খ্রিঃ অমৃতসরে একটি পুষ্করিনী ও একখণ্ড ভূমি ( ৫০০ বিঘা ) দান করেন ।
  • হারমিন্দর সাহিবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন হাজি মিয়াঁ মীর ।
  • অমৃতসর শহরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনা করেছিলেন ।
  • গুরু রামদাসের সময় পবিত্র অমৃতসর শহরে স্বর্ণমন্দির নির্মাণ কার্য শুরু হয় ।

গুরু অর্জুনদেব (১৫৮১- ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দ )

  • শিখদের পঞ্চম গুরু ।
  • গুরু অর্জুন শিখদের পবিত্রতম ধর্মশাস্ত্র “আদিগ্রন্থ ” বা “গ্রন্থসাহেব” -এর সংকলন করেন ( ১৬০৪ খ্রিঃ ) । এতে ৫,৮৯৪ টি স্তোত্র রয়েছে ।
  • অমৃতসর এবং কারাতপুরের নির্মাণকার্য সম্পন্ন করেছিলেন ।
  • জাহাঙ্গীরের বিদ্রোহী পুত্র খসরুকে সাহায্য করার জন্য জাহাঙ্গীর গুরু অর্জুনদেবকে হত্যা করেন ।
  • শিখদের প্রথম শহীদ – “শাহিদে-দি-সরতাজ” ( The Crown of Martyrs)

গুরু হরগোবিন্দ (১৬০৬ – ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ )

  • শিখদের ষষ্ঠ গুরু ।
  • সবচেয়ে বেশি সময়ের জন্য শিখগুরু ছিলেন ।
  • শিখদের একটি সামরিক জাতিতে পরিণত করেছিলেন ।
  • আকাল তখ্ত স্থাপনা করেন ।
  • মুঘল সেনাদের পরাস্ত করেন ।
  • “সাচ্চা পাদশাহ” উপাধি নেন ।
  • তাঁর রাজধানী কারতারপুরে স্থাপনা করেন ।
  • শিখদের কাছে মিরি ও পিরি ( দুটি চাকু ) রাখার উপদেশ দেন ।
  • গুরু হরগােবিন্দকে গােয়ালিয়র জেলে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর বন্দি করে রাখেন ।
  • গুরু হরগােবিন্দের সঙ্গে মুঘল সম্রাট শাজাহানের সংঘাত সৃষ্টি হয় । কর্তারপুর যুদ্ধে হরগােবিন্দ জয়লাভ করেন এবং এখানেই নতুন কর্মকেন্দ্র স্থাপন করেন ।

গুরু হররায় (১৬৪৪- ১৬৬১ খ্রিস্টাব্দ )

  • শিখদের সপ্তম গুরু ।
  • ঔরঙ্গজেবের ভ্রাতা দারাশিকোকে আশ্রয় দেবার জন্য ঔরঙ্গজেব গুরু হররায়কে মিথ্যে ইসলাম বিরোধী আখ্যা দিয়ে হত্যা করেন ।

গুরু হরকিষণ (১৬৬১- ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দ )

  • শিখদের অষ্টম গুরু ।
  • মাত্র ৮ বছর বয়সে গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ।

গুরু তেগবাহাদুর (১৬৬৫- ১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দ )

  • শিখদের নবম গুরু ।
  • বিহার ও আসামে শিখ ধর্মপ্রচার করেন ।
  • বান্দা বাহাদুরকে শিখ সেনার প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেন ।
  • ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ।
  • দিল্লির লালকেল্লার অদূরে চাঁদনী চকে জন সাধারণের সমক্ষে ঔরঙ্গজেব তেগ বাহাদুরকে শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করেন ।
  • তেগ বাহাদুরকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে বর্তমানে “সিস্ গঞ্জ সাহিব গুরুদ্বারা” রয়েছে ।

গুরু গোবিন্দ সিং (১৬৭৫ – ১৭০৮ খ্রিস্টাব্দ )

  • শিখদের দশম গুরু এবং মনুষ্যরূপে শিখদের শেষ গুরু ।
  • পাটনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।
  • খালসা প্রথার প্রবর্তন করেছিলেন ।
  • তিনি “দশম পাদশা কা গ্রন্থ” রচনা করেছিলেন ।
  • শিখদের পঞ্চনীতি ( দাড়ি রাখা, পাগড়ি পরা, কৃপাণ রাখা ইত্যাদি ) -এর প্রবর্তন করেন ।
  • সব শিখকে নিজের নামের শেষে সিং উপাধি ব্যবহার করার আদেশ দেন ।
  • মুঘল গভর্নর ওয়াজির খানের প্রেরিত আফগান ঘাতকের ছুরির আঘাতে আহত হন এবং মারা যান ।

মহারাজা রঞ্জিত সিং

  • মহারাজরঞ্জিত সিং শিখগুরু না হলেও শিখদের ইতিহাসে তার অবদান অবিস্বরণীয় ।
  • ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালাতে জন্মগ্রহণ করেন ।
  • তিনি সুকেরচকিয়া মিশলের অন্তর্গত ছিলেন ।
  • ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি লাহোর দখল করেন এবং গুজরানওয়ালা থেকে লাহোরে নিজের রাজধানী নিয়ে যান ।
  • ১৮০১সালে ১২ এপ্রিল পাঞ্জাবের মহারাজা হিসাবে রণজিৎ সিংকে ঘোষণা করা হয় ।
  • ১৮০২ সালের তিনি এক মুসলিম বাইজী মোরান সরকারকে বিবাহ করেন যার জন্য পরবর্তীকালে তাঁকে শিখ সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হয় ।
  • তিনি আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁর সেনাবাহিনীকে আধুনিক করে তোলেন ।
  • শের-ই-পাঞ্জাব ( Lion of Punjab ) নামে পরিচিত ছিলেন ।
  • অত্যধিক মদ্যপানের জন্য লিভার খারাপ হয়ে ( মতান্তরে স্ট্রোক হয়ে ) তিনি ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে মারা যান ।

রঞ্জিত সিংয়ের মৃত্যুর পর,সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিভাগ এবং রাজনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। অবশেষে, ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধে পরাজয়ের পর শিখ সাম্রাজ্য বিভক্ত হয়ে যায় |

Some Important Facts

  • শিখ ধর্মের প্রধান গ্রন্থের নাম ‘গ্রন্থসাহেব’
  • গুরু গোবিন্দ সিং এর পরে শিখরা গ্রন্থ সাহেবকে গুরু বলে মানেন।